নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার আমের জন্য রাজশাহী অঞ্চলের আবহাওয়া ভালো ছিল। ঝড়, শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন না-থাকায় আমের উৎপাদন হয়েছে ভালো। এ জন্য জাতভেদে কিছু আমের দাম ছিল কম। তারপরও কৃষি বিভাগের আশা, আমের রাজ্যে অর্থনীতিতে আম থেকেই এবার যোগ হবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা, রাজশাহীতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, নওগাঁয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা এবং নাটোর থেকে প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলার উপ-পরিচালকরা।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর সঙ্গে নাটোরেও আমচাষ বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাই শুধু নয় নাটোরের জন্য একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। এই জেলায় এবার ৫ হাজার ৭৪৭ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৩ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন গড় ফলন ধরে মোট ৭৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অন্য তিন জেলার মতো এখানেও এবার ফলন ভাল হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নাটোরের উপ-পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কোনো কোনো আমের দাম ছিল ৩০ টাকা কেজি। আবার কোনো আমের দাম ৭০ টাকাও উঠেছে। এ জন্য আমরা আমের গড় দাম ধরেছি ৫০ টাকা। সে হিসাবে নাটোর থেকে ৩৮৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার আম বিক্রি হওয়ার আশা আমরা করছি। একটু কম-বেশি হতে পারে।’
অন্য তিন জেলার আম বিক্রির টাকার হিসাব করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন, রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন এবং নওগাঁয় ৩০ হাজার হেক্টর আমবাগান থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চার জেলার ৯২ হাজার ৯১৩ হেক্টর জমির বাগান থেকে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫০৬ মেট্রিক টন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চার জেলার মধ্যে এবার আমের দাম সবচেয়ে ভাল ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে। দেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে আমের দাম চড়া পুরো মৌসুমজুড়েই। এখানকার চেয়ে রাজশাহীর বৃহত্তম আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে দাম ছিল তুলনামূলক কম। বানেশ্বর ও কানসাটের আমের দামের পার্থক্য মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে।
নওগাঁর আম বিক্রির প্রধান মোকাম সাপাহার উপজেলা সদরের জিরোপয়েন্ট এলাকাতেও এবার পাইকারি আমের দাম ছিল তুলনামুলক কম।
বানেশ্বরের আম চাষি ও ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গাছে এখন প্রচুর পরিমাণে আশ্বিনা আম আছে। আর কিছু আছে ফজলি। রাজশাহীর বাগানে আম্রপালি শেষ হয়ে গেছে। তবে বানেশ্বরে এখনো নওগাঁ থেকে কিছু আম্রপালি আসছে। এই আম বানেশ্বরে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। ফজলি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে। তবে আশ্বিনার দাম এখন খুব কম। এই আম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একমণ আম গাছ থেকে নামিয়ে বাজারে তুলতেই ২০০ টাকা খরচ হয়। দাম এত কম হলে চাষিরা মজুরি খরচ দেবেন কীভাবে আর বাগান মালিকের ইজারার টাকাই বা শোধ দেবেন কীভাবে? আমবাগান ইজারা নেওয়া রাজশাহীর চাষিরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কানসাটে আমের দাম ভালো বলে সেখানে লাভ হতে পারে।’
রাজশাহীতে শনিবার আশ্বিনা যখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই আম কানসাটে বিক্রি হয়েছে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দরে। শিবগঞ্জের তেলকুপি এলাকার আমচাষি সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পেয়েছি। লাভ কত হলো সেটা সব আম বিক্রি শেষে হিসাবের পর বলতে পারব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘কোয়ালিটি আম উৎপাদন করলে দাম ভাল পাওয়া যায়। আমার জেলায় ৭০ ভাগ আম গাছ ফজলির। তারপরও কোয়ালিটি আম হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া গেছে। লোকসান দেখি না।’
আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ আর নওগাঁর একজন চাষিও বলতে পারবেন না যে এবার লোকসান হয়েছে। রাজশাহীর দু’একজন বলতে পারেন। সবমিলিয়ে আমরা এবার আমের মৌসুমটাকে ভালই দেখছি।’