নিজস্ব প্রতিবেদক
শারদীয় দুর্গাপূজার বাকি আর মাত্র কদিন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে রাজশাহীর পূজোমন্ডপগুলোতে। প্রতিমায় চলছে রং তুলির আঁচড় দেয়ার কাজ। সেই লক্ষ্যে জোরেশোরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা। আবার মন্ডগুলোকে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মঞ্চকর্মীরা। দেবীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এদিকে, পূজোকে ঘিরে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় ৪৬৩ মণ্ডপে দুর্গাপূজো অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় ৩৬২টি ও মহানগরীতে ১০১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারো জমজমাটভাবে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজশাহীর মন্ডপগুলো। দেবীর আরাধনা সফল করার সকল প্রস্তুতি নিয়েছে পূজো উদযাপন কমিটিগুলো। এদিকে প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন কারিগররা। তবে মন্ডপের ঐতিহ্যের ছাপ ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিমার সাজসজ্জায়।
নগরীর আলুপট্টি এলাকার পাল পাড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পিরা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে থরে থরে সাজানো প্রতিমা। কোনটিতে কেউ রঙ লাগাছেন। কোনটিতে আবার চুন। পতিমা প্রস্তুত হলেও শেষ মহুর্তের কাজ চলছে এখানে। তুলির আঁচড়ে ফুলে উঠছে এক একটি প্রতিমা।
এবার ২৮টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন কার্তিক চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, রাজশাহী নগর ও আশেপাশের মোট ২৮টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। শেষ মুর্তের কাজ এখনো বাকি আছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু প্রতিমার কাজ শেষ হয়েছে। সেগুলো ডেলিভারিও হয়েছে। কিছু প্রতিমা আজও ডেলিভারি দেওয়া হবে। আসলে এখন প্রতিমা কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেকেই এই পেশায় আসতে চাই না। তারপরও আমরা বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছি। এবারও সব সামগ্রীর দাম বেশি। তবে সব কিছু মাথায় রেখে এবারও যথা সময়ে প্রতিমা দিতে পারবো।
রাজশাহীর একটি মন্ডপ সাজে এক থিম নিয়ে। এবারও কমতি নেই। নানান থিম নিয়ে এবারও সাজবে মন্ডপগুলো। এসব মন্ডপ প্রস্তুতি ও আলোক সজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপেই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মঞ্চকর্মীরা।
রাজশাহী নগরী হেতেম খাঁ মোড়ের মঞ্চ তৈরি করছেন সঞ্জয় কর্মকার। তিনি বলেন, অনেক কাজের অর্ডার আছে। আগে থেকেই কিছু কাজ শেষ করছি। এখন দিন রাত সব সময় আমরা মঞ্চ বানাচ্ছি। প্রতিটি মঞ্চেরই আলাদা আলাদা ডিজাইন আছে। এখন অবকাঠামো ও আলোক সজ্জা হচ্ছে। দুই একদিন পর থেকেই মঞ্চ সাজানোর কাজ শুরু হবে।
এদিকে পূজো উপলক্ষ্যে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেধে দেওয়া হয়েছে ২৬টি নির্দেশনা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনা জামিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী নগরীতে এবার ১০১টি মন্ডপে পূজা আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪২টি অতিগুরুত্বপূর্ন ৩৭টি গুরুত্বপূর্ন ও ২২টি সাধারণ মন্ডপে পূজো আয়েজন হবে। এসব মন্ডপকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুজোকে ঘিরে সাদা পোশাকে পুলিশ, র্যাব, আনসার বহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পুজোয় কোন ধরেন হুমকি নেই। তারপরও আমরা সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, আমাদের সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজশাহী মহানগরের সভাপতি শরৎ চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের পূজো আয়োজনে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে। নিরাপত্তা নিয়ে আমদের কোন ঘাটতি নেই। সরকারও আমাদের সব ধরণের নিরাপত্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে কী হবে সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা আছে। প্রতিটি মন্দিরে সেচ্ছাসেবক রাখা হচ্ছে। আশা করছি শন্তিপূর্ণভাবেই পূজো সম্পন্ন হবে।