• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন

মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে গেলেন এমপি

রিপোর্টার নাম:
আপডেট মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে এক মাদরাসা অধ্যক্ষকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে মাদারাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি।

জানা গেছে, সোমবার সকালে রাজশাহীর পুঠিয়ার বিড়ালদহ এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় সংসদ সদস্যের লোকজন। এর প্রতিবাদে মাদারাসার ছাত্র-ছাত্রীরা বিড়ালদহ বাজারে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে জোর-জবরদস্তি করে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

স্থানীয় লোকজন ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা জানায়, মাদরাসার কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওই এলাকার মঈন, শফিকসহ কয়েকজন একটি মাইক্রোবাস নিয়ে মাদরাসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। এরপর ওই গাড়ি থেকে তিন-চার ব্যক্তি বেরিয়ে এসে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মাদরাসার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী বিড়ালদহ বাজার সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধের ফলে রাস্তার উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুঠিয়া থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

অধ্যক্ষকে এক ঘণ্টার মধ্যে অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্ত করে আনা হবে- পুলিশের এমন আশ্বাসে সড়ক অবরোধ স্থগিত করা হয়।

বিড়ালদহ এসকেডিএস ফাজিল মাদরাসার সভাপতি দেওয়ান আব্দুস সালেক বলেন, ‘এমপি ডা. মনসুর রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য মঈন, শফিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন একটি গাড়ি নিয়ে এসে অধ্যক্ষকে এমপির বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিষয়টি তখন প্রশাসনসহ সবার নজরে আসে। এরপর তারা অধ্যক্ষকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে আমরা অধ্যক্ষকে কাশিয়াডাঙা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আব্দুস সালেক বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমরা স্যারকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। তবে এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করা হবে।’

উদ্ধার হওয়ার পর বিড়ালদহ অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ অনেক শিক্ষক ও ছাত্রদের চোখের সামনে এভাবে লাঞ্ছিত হলাম। আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছিলো। অন্দোলন দেখে ওসিকে ডেকে বলেছেন, আন্দোলন বন্ধ করতে। আমি বলেছি, আন্দোলন কি আমি বন্ধ করতে পারবো?’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি এমপির সঙ্গে দেখা করবো না এমনটা বলিনি। আমি তো রাতেই আসতে চেয়েছিলাম। তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তারা আমাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এগুলোর প্রতিকার দরকার। এটি শুধু বিড়ালদহ নয়, পুরো বাংলাদেশেরই একটি ক্ষতি করেছে। আমি এর সুবিচার চাই।’

এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবেন কী না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাকে এখন বুঝতে দেন। দেখি কী করি। আমি তো এখনও ভয়ে আছি। পরে না হয় বুঝেশুনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অপহরণের তথ্যটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আমি ওই শিক্ষককে কয়েকদিন থেকে বলে আসছি যে আমার সঙ্গে দেখা করেন। ওই মাদরাসার কমিটি নিয়ে ভেজাল চলতেছে। কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রফেসর নওশাদ। তাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে সভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলতেছিলো।

‘আমি উনাকে বার বার বলছি আপনি আমার কাছে আসেন, আমি আপনাকে কী বলি একটু শুনে যান। কিন্তু আসে নাই। সে আজকে আসছিল, পরে তার সঙ্গে কথা হলো। আমি তাকে বললাম, কমিটি করে লাভ কী আপনার? আপনার বেতনগুলো স্বাক্ষর হলেই তো হলো। আপনার টেনশনের কোনো কারণ নাই। আমি সমঝোতা করে দিয়েছি।’

এমপি আরও বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমার এখান থেকে মিষ্টি ও চা খেয়ে বিদায় হয়েছে। এটা অপহরণ নয়। তাকে অপহরণ করা হয় নি। তিনি ইচ্ছেমতো চলে গেছেন।’

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষক আপাতত বাড়িতে আছেন। এটি অপহরণ কী না সেটি আমরা তদন্ত করে বলতে পারব।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরিতে আরো নিউজ