• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল: চারঘাটে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের নামে মামলা

রিপোর্টার নাম:
আপডেট বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহীর চারঘাটে দুই যুবককে নিষ্ঠুর নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হবার পর অবশেষে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার মোহন আলীর মা নারী গ্রাম্য পুলিশ নাসিমা খাতুন বাদী হয়ে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর সোমবার রাতে চারঘাট মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে দুই যুবককে হাত-পা, চোখ বেঁধে পানিতে চুবিয়ে ও মাটিতে পুঁতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। গত ৯ জুলাই ধারণ করা নির্যাতনের একটি ভিডিও গত ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের এ খবর প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ^াস পেয়ে ঘটনায় দীর্ঘ সময় পর এ ঘটনায় মামলা হলো বলে জানিয়েছেন বাদি।

নির্যাতনের শিকার দুই যুবক হলেন- চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের মোহন আলী (২৫) ও তার প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেন মছু (২২)। নির্যাতনের ঘটনার মামলায় শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান, মুক্তার হোসেন ও তাদের ৬ সহযোগীসহ মোট ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই দৌলতপুর গ্রামের মানিক আলীর বাড়ি থেকে গরু বিক্রি করা ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। নির্যাতনের শিকার মোহন ও মছু টাকা চুরি করেছে এমন সন্দেহ করে মানিক টাকা উদ্ধারের জন্য মাদক কারবারি মুক্তার, ছাত্রলীগ নেতা শুভ, মিজানসহ তাদের সহযোগীদের দায়িত্ব দেয়। তারা গত ৯ জুলাই সকালে মোহনকে কাঠ মিলে কাজ করা অবস্থায় এবং মছুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টাকা চুরি করার কথা স্বীকার করাতে মোহনকে হাত-পা বেঁধে ডোবার পানিতে চুবিয়ে রেখে ও মছুকে মাটিতে পুতে সারা দিন নির্যাতন করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর চেষ্টা করলে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর গত ১৮ আগস্ট পলক নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি পুকুরের হাটু পানিতে হাত-পা বেঁধে মোহনকে ফেলে রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে একটি খুটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে মাথা তুলে শ^াস নিচ্ছে। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে দেখছে এবং আরেকজন স্বীকারোক্তি আদায় করার ভিডিও করছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ভাইরাল হবার মাস খানেক আগেই জানতে পারে পুলিশ। এরপর নির্যাতনের শিকার দুই যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করতে রাজি না হওয়ায় চারঘাট মডেল থানা পুলিশ নিজেরা একটি জিডি করে রাখে। এরপর ১৮ই আগস্ট ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি নিয়ে আবারও নতুন করে তদন্ত শুরু করে।

ঘটনার দেড় মাস পর মামলার বিষয়ে বাদী নাসিমা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে নৃশংস ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনার এতদিন পরেও এখনো শরীর অকেজো হয়ে আছে। ঘটনার সময় মামলার করার সাহস ছিলনা। এখন প্রশাসন এসে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এজন্য দেরিতে হলেও মামলা দায়ের করেছি। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে রাজশাহীর চারঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানান, ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। পুলিশ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের বার বার অনুরোধ জানানোর পর সোমবার থানায় এসে এজাহার দায়ের করলে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের আটকে অভিযান চলমান আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরিতে আরো নিউজ