রাজশাহী সংবাদ ডেস্ক
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা সফররত দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে এদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে চায়। খবর: নিউজবাংলা
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ শেষে তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে উজরা জেয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন আইন, শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপের বিষয়ে সাংবাদিকরা অভিমত জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, ‘আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।’ ব্রিফিংয়ের লিখিত অংশে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বৃহস্পতিবার দিনভর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট।
গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে- এমন আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ-মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়।
‘আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই আন্ডার সেক্রেটারি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান। বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের বিষয়টি উল্লেখ করে উজরা জেয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন চায়, জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন নয়। তবে এর জন্য মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয়।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এই ভিসা নীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া।