নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৪জন
ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে রাজশাহী আসছিলো পরিবারটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় বেলপুকুরে সিএনজি ও ট্রাকের সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বেলপুকুর বাইপাস চেকপোস্ট এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সকলেই নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বাসিন্দা। তারা চিকিৎসার জন্য সিএনজিতে চড়ে রাজশাহী আসছিলেন।
নিহতরা হলেন, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামের ইনসাব আলী (৭৫), তার ছেলে আইয়ুব আলী লাবু (৩৫), মেয়ে পারভিন বেগম (৩৪) এবং ইনসাব আলীর নাতনি রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শারমিন (১৭), এবং গুরুদাসপুর উপজেলার মকিমপুর গ্রামের সিএনজি চালক মোখলেসুর রহমান মোখলেস (৪৫)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হৃদয় (১৮) নামে এক যুবক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নিহত ইনসাব আলীর স্বজনেরা জানান, কিছুদিন আগে ইনসাব আলীর ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর কেমো দেওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় কেমো দেওয়া হয়েছে। শনিবার তৃতীয় কেমো দেয়ার কথা ছিল। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা ইনসাব আলীকে রাজশাহী নিয়ে আসছিলেন। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই পরিবারের সকলেই মারা যান।
ট্রাকের আরোহী রতন কুমার সাহা জানান, তিনি টিসিবির পণ্যের একজন পরিবেশক। রাজশাহী থেকে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা আমচত্বর-বেলপুকুর সড়ক হয়ে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে ঢুকছিলেন। ট্রাকের গতি কমই ছিল। সামনে থেকে দ্রুতগতির একটি সিএনজি এসে ট্রাকের নিচে ঢুকে যায়। এরপর ট্রাকটি মুদি দোকানের ওপর দিয়ে সিএনজিকে টেনে নিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটি একেবারেই দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরী বিভাগের চিকিৎসক চারজনকে মৃতু ঘোষণা করেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, নগরীর খড়খড়ি বাইপাস থেকে ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ড-১৪-৪৮৫৩) নাটোরের দিকে যাচ্ছিলো। আর সিএনজি (নাটোর থ ১১-০০৪৫) নাটোর থেকে রাজশাহী আসার সময় বেলপুকুর চেকপোস্ট মোড়ে সংঘর্ষ হয়। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক ও সিএনজি পাশ^বর্তি খাদে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সাথে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ করে।
লাশ দেখে আঁতকে ওঠেন সাদিয়া-মিথিলা
রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিলা আক্তার এবং তার চাচাত বোন সড়ক দুর্ঘটনায় এক আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এসে একজনের লাশ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর একের পর এক প্রিয়জনদের লাশ দেখে আঁতকে ওঠেন দুই চাচাতো বোন।
সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইনসাফ আলীকে চিনতে পেরে আহাজারি শুরু করেন মিথিলা। সম্পর্কে ইনসাফ আলী মিথিলার চাচা।
মিথিলা জানান, নিহত সবাই তার আত্মীয়। চাচাকে চিনতে পারিনি। বলেই আহাজারি শুরু করেন।