তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ তীব্র গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহুর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাস।
‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বকের ছা’ গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক , উপজেলার প্রতিটি এলাকার তালগাছ গুলোতে কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। মধু মাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালের কুই, কেউ বলে তালের আটি।
গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুনাগুন। তাই জৈষ্ঠের এ মধু মাসে বাজারে নানা ফল ওঠলেও নওগাঁর আত্রাইয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে তালের শাঁস। গ্রীস্মের এই দিনে আত্রাইয়ে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তাই সবার হাতে পোঁছে যায় কঁচি তালের শাঁস। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছেনা, ক্রেতারা দড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে।
জানা গেছে, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার গৃহস্তদের গাছের তালের শাঁস যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সী লোকের মাঝে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে।
উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে। তাবে কৃষি বিভাগে এর কোন পরিসংখ্যান নেই। তালের শাঁস অতি সু স্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ফল।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এবং অলিতে গলিতে তালের শাঁস বিক্রি করে অনেক হত দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম এলাকার বিক্রেতা আব্দুল মান্নান জানান, তিনি প্রতিবছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন। তবে গাছ ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্ট কর। বৈশাখ মাস থেকে জৈষ্ঠের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ৫ থেকে ১০টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে চার জনের সংসার ভালই চলছে।
উপজেলার রাইপুর গ্রামের ক্রেতা বিপ্লব কুমার জানান, তালের শাস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাস খেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দুধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ বোপন করতো কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।
তালের শাঁসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে ডা. রুহুল আমিন রাজ বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, এ, বিকমপে¬ক্সসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপশ কুমার রায় বলেন, এই এলাকায় তাল গাছের বাণিজ্যিক কোন বাগান নেই। মানুষ সাধারণত বসত বাড়ী, রাস্তার পাশে তাল গাছ রোপন করে থাকে। আবার চোখে পড়ে রেল লাইনের দু-পাশে। তালগাছ লম্বা হওয়ার কারনে বজ্রপাত রোধে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি তাল গাছ রোপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।