• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

ঝাড়ুদার আয়ার হাতে ডেলিভারি, জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে কী হচ্ছে?

রিপোর্টার নাম:
আপডেট শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

শেখ মেহেদী হাসান, ঈশ্বরদী (পাবনা)
গাইনি বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতিতে ঝাড়ুদার ও আয়ার হাতে নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে আবারও নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির জীবন সংকটে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৮ জুন) ভোররাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

 

খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া। উত্তেজনারোধে জমজম হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন মৃত নবজাতকের বাবা মোঃ সাইদুর রহমান।

 

এর আগে চলতি বছরের ১১ মার্চ একই হাসপাতালে ডাঃ নাফিসা কবিরের দায়িত্বে অবহেলায় উপজেলার সলিমপুরের মিরকামারি গ্রামের ইমারত আলীর মেয়ে প্রসূতি ইসরাত জাহান সিনথিয়ার নবজাতকের মৃত্যু হয়। প্রসূতি সিনথিয়ার অবস্থাও গুরুতর ছিল। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

 

ভুক্তভোগি পরিবার ও থানায় দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর পার্শ্ববর্তি নাটোরের লালপুরের মাজদিয়া এলাকার সাইদুর রহমানের স্ত্রী জিমু খাতুনের সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ নাফিসা কবিরের নিকট নিয়ে আসেন। বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই তাই নরমালে সম্ভব না হলে অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করাতে হবে বলে জানান ডাক্তার নাফিসা। পরিবার থেকে অপারেশন করার কথা বলা হলে তিন ঘন্টা পর অপারেশন করা হবে জানিয়ে বাসায় চলে যান ডাক্তার নাফিসা।

এর দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর জমজম হাসপাতালের আয়া সালমা খাতুন, ঝাড়ুদার পারুল, সাথি ও ওটিবয় মোঃ রাসেল প্রসূতি জিমুকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। তারা নরমালে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে প্রসূতির গোপনাঙ্গ ছিড়ে রক্তাক্ত করে ওটি থেকে নবজাতকের মরদেহ বের করে আনে। পরে তারা প্রসুতির গোপনাঙ্গের দুপাশে ১৬টি সেলাই দেয়। এরপরও রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকে। এতে জীবন সংকটে পড়েছেন প্রসূতি।

এসময় অপচিকিৎসার বিষয়ে আপত্তি তোলেন প্রসূতির স্বজনরা। খবর পেয়ে ডাক্তার নাফিসা কবির ও তার স্বামী ডাক্তার রিয়াদুল কবির জান্নাত হাসপাতালে এসে প্রসূতির স্বামী সাইদুরের সঙ্গে দুব্যর্বহার আচরণ করে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সাইদুর জরুরী সেবা নম্বার ৯৯৯ কল করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে সাইদুরকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে উত্তেজিত হয়ে পড়েন প্রসূতির স্বজনরা।

 

প্রসূতির স্বামী ও নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, অপারেশন ছাড়া নরমাল ডেলিভারি করাতে গেলে ঝুঁকি আছে জানিয়েছিলেন ডাক্তার নাফিসা। তিন ঘন্টা পর অপারেশন করা হবে জানানোর পর ডাক্তার নাফিসার অনুপস্থিতিতে ঝাড়ুদার, আয়া ও ওটিবয় নার্স সেজে টেনে হেঁচড়ে ডেলিভারি করে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীর গোপনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলে ১৬টি সেলাই দিয়েছে। এরপরও রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। তার অবস্থাও সংকটময়। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে থানায় এজাহার দায়ের করেছি। পাবনা সিভিল সার্জন বরাবরও অভিযোগ করেছি।

 

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জমজম স্পেশালাইজ হাসপাতালসহ ঈশ্বরদীর ক্লিনিকগুলো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভর্তি। বারবার নবজাতক, প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সবগুলো ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

পাবনার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মাদ খায়রুল কবির বলেন, নিহত নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির অবস্থা সংকটময় হওয়ার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেছেন প্রসূতির স্বামী সাইদুর রহমান। জমজম হাসপাতাল থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

 

জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ নাফিসা কবির বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে নার্সরা নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নবজাতকের গলায় নাড়ি জড়িয়ে ফাঁস লেগে মারা গেছে। এটা হত্যা নয়, একটি দুর্ঘটনা।

বাংলার কথা/জুন ০৮, ২০২৪

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরিতে আরো নিউজ