বাঘা প্রতিনিধি
কখনো বাবার ওয়ান টাইম থালা-গ্লাস দোকানে, আবার কখনো অন্যের দোকানে পারটাইম কাজের মাঝে বই হাতে নিয়ে পড়তে হয়েছে। আবার বাবার ছোট্ট চাকরির কাজটাও সামাল দিতে হয়েছে কখনোও। এভাবেই কাজের মাঝে পড়াশোনা করে এবার এসএসসির প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে দরিদ্র পরিবারের মো. রাব্বি মন্ডল। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইসলামী একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়, কারিগরি, কৃষি কলেজ থেকে জেনারেল ইলেকট্রনিক ওয়ার্ক বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মো. রাব্বি মন্ডল। পিইসি, জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। নিজের আলোয় আলোকিত হয়েছে সে। তার (মো. রাব্বি মন্ডল) একমাত্র বোন মোসা.তানজিম খাতুনও (মৃদু প্রতিবন্ধী) গত এসএসসির ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাঘা পৌরসভার মর্শিদপুর গ্রামের বাসিন্দা পিতা আব্দুল খালেক ও মাতা রুবিনা দম্পতির একমাত্র ছেলে মো. রাব্বি মন্ডল ও একমাত্র মেয়ে মোসা. তানজিম খাতুন। বাবা আব্দুল খালেক নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী(মৃদু)। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে ইডিএমসি(রানার) পদে মাস্টাররোলে চাকরি করেন তিনি। বেতন পান ৪,১৭৭ টাকা। তার এই উপার্জনে ৫ সদস্যর সংসার চলে না বলে মাঝে মধ্যে অন্যেও কাজে (কামলায়) যেতে হয়। তখন তার চাকরি ও ছোট্ট ব্যবসাটা সামাল দেন ছেলে মো. রাব্বি মন্ডল। জমি বলতে বাড়ি ভিটার আড়াই কাঠা জায়গা সম্বল। চাকরিটওা স্থায়ী নয় আব্দুল খালেকের। ৪২ বছর বয়সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যর সংসার চালাতে হয় তাকে।
আব্দুল খালেক জানান, ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ যোগান দিতে পারেননি। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে বেতনের টাকায় আর ছোট্ট ব্যবসার আয় দিয়ে সংসারই চলেনা। তাই কখনো কখনো কামলা দিতে হয়। তখন ছেলেটাকে কখনো নিজের দোকানে আবার কখনো অন্যের দোকানে পারটাইম কাজ আবার আমার অনুপস্থিতে চাকরিটাও সামাল দিতে হয় ছেলেকে। এভাবেই নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে পড়া লেখার খরচ যুগিয়েছে মো. রাব্বি মন্ডল। তার স্ত্রী রুবিনা বেগম বাড়িতে হাতের কাজ আর মুরগি পালন করে কোন রকমে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ যুগিয়েছে। তাতেও সামাল দিতে না পেরে মেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তির জন্য গত মাসে ২১ দিন বাইরে কামলা দিতে হয়েছে।
ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের মা রুবিনা বেগম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়ার খরচতো দুরের কথা ভালো খাবার কিংবা পোষাকও দিতে পারেননি। নিজের প্রচেষ্টায় সাফল্য বয়ে এনেছে। মেয়েটাকে বিয়ে দিতে চেয়েও মেয়েকে রাজি করাতে পারিনি। মেয়ে বলছে লেখা পড়া করবো। এখন কিভাবে তাদের শহরের কলেজে পড়াব ? তা নিয়ে দুঃচিন্তা চেপে ধরেছে। তার মা আরোও জানান, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল ছেলে-মেয়ে। মেয়ে মোসা. তানজিম খাতুন এবছর এইচএসসি পাশ করে ঈশ্বরদী
কলেজে অর্নাসে ভর্তি হয়েছে। ছেলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মো.রাব্বি মন্ডল জানান, ‘আমি অন্ধকার থেকে আলোতে এসেছি নানা রকমের বাধা পেরিয়ে। জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভালো কোন কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিবো। সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করা তার জীবনের ব্রত। যদিও পরিবারের আর্থিক অনটন সেই স্বপ্নের অভিযাত্রায় বাধ সাধবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে তার। তার পরেও স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা তার। ইসলামী একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি, কৃষি কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, মো. রাব্বি মন্ডল আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তার বোনও প্রতিবন্ধকতা জয় করে সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছে ভাল রেজাল্ট। আমি আশা করি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে।