রাজশাহী সংবাদ ডেস্ক
চাঁদের রহস্যে ঘেরা দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে পা রাখলো ভারত। বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় দেশটির চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণ করতে শুরু করে। ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়ে চন্দ্রযান-৩। পৃথিবীর আর কোনও দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ভারতের কোটি কোটি মানুষের চোখ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে।
ঐতিহাসিক এই অভিযানের চূড়ান্ত মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচার করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো।
ভারতের দেড় শ’ কোটি মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতীক্ষা করে ছিল এই মহার্ঘ প্রহরের জন্য। চন্দ্রযানের চূড়ান্ত সাফল্যের কামনায় নমাজ, বিশেষ পূজা থেকে শুরু করে স্কুলে স্কুলে লাইভ অবতরণ দেখানোর ব্যবস্থা ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার টুইটার অ্যাকাউন্টে সব বিভেদ ভুলে দেশবাসীকে একসঙ্গে চন্দ্রযানের সাফল্য কামনার আবেদন জানান। ভূয়সী প্রশংসা করেন বিজ্ঞানীদের।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেন, রাজ্যের সব সরকারি স্কুলে চন্দ্রযানের চন্দ্রাবতরণ সরাসরি দেখানো হবে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানান, রাজ্যবাসীকে নিয়ে তিনিও চন্দ্রযানের চন্দ্রে অবতরণকে উদযাপন করবেন।
এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল যেন আরও কয়েক গুণ বেশি। আজমীর শরিফের পাশাপাশি লখনউয়ে ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়া আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ নমাজের। সেখানে বহু মানুষ চন্দ্রযানের সাফল্য কামনা করেন।
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে বিশেষ ভস্ম আরতির আয়োজন করা হয়। উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশের পরমার্থ নিকেতন ঘাটে জাতীয় পতাকা হাতে গঙ্গা আরতিতে অংশ নেন বহু সাধারণ মানুষ।
আসানসোলে চন্দ্র অভিযানে ভারতের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাফল্য কামনায় মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে মণ্ডপ বেঁধে মন্দিরের সামনে হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। সব মিলিয়ে চাঁদের মাটিতে ভারতের চন্দ্রযানের পা দেয়া ঘিরে উন্মাদনায় টগবগ করে ফুটেছে গোটা ভারত।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) আগে থেকেই ঘোষণা দেয়, ২৩ অগস্ট চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে ল্যান্ডার।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ‘বিক্রম’। সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশের কোনো মহাকাশযান নামতে পারেনি। ইসরো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে ল্যান্ডার নামাতে সক্ষম হওয়ায় ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত।
গত ১৪ জুলাই ভারত চাঁদের উদ্দেশে তৃতীয় অভিযান শুরু করে। ওই দিন দুপুরে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে চাঁদের দিকে রওনা দেয় চন্দ্রযান ৩। একটি এলভিএম ৩ রকেট দিয়ে চাঁদের উদ্দেশে চন্দ্রযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
চন্দ্রাভিযানে রয়েছে একটি ল্যাণ্ডার ও একটি রোভার। ল্যাণ্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে আর রোভার চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যাণ্ডারটির নাম রাখা হয়েছে ‘বিক্রম’ আর রোভারটির নাম ‘প্রজ্ঞান’।
এই অভিযানে সফল হওয়ায় চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হলো ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছিল।
আগের অভিযানে ২০১৯ সালে ঠিক চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সময় ল্যাণ্ডার-রোভারটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে চন্দ্রযান-২-এর সেই অরবিটার এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বেস-স্টেশনে নিয়মিত তথ্য পাঠিয়ে চলেছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল নিয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে চন্দ্রযান-৩ ওই অঞ্চলে অবতরণের ফলে চাঁদের বিজ্ঞানীদের সেই ধাঁধাঁ ঘুচবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চন্দ্র পৃষ্ঠের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে চাঁদের বয়স আবিষ্কারেরও চেষ্টা হবে বলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
দিল্লির শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্সের শিক্ষক ড. আকাশ সিনহা বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সম্ভাবনাও এই অঞ্চলেই বেশি।
চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই দক্ষিণ মেরু অংশেই ২০০৮ সালে জলের সন্ধান পেয়েছিল চন্দ্রযান-১।