নিজস্ব প্রতিবেদক
অবরোধের প্রভাবে চরম কষ্টে দিন কাটছে রাজশাহীর শ্রমিক, দিনমজুরদের। বিশেষ করে পরিবহণ সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা বেশি কষ্টে আছেন। এছাড়াও সাধারণ দিনমজুরদেরও কাজ কমে যাওয়ায় তাদের সংসারেও চলছে দুর্দিন।
সকালে নিউ মার্কেট যাবার জন্য রিকশা চালককে ভাড়া জানতে চাইলাম। বললেন, ৪০ টাকা দিবেন। আমি বললাম, ভাড়াতো ৩০ টাকা, ৪০ টাকা চাইছেন কেন? মাঝ বয়সি রিকশা চালক বললেন, ভাড়া ৩০টাকাই ১০টা টাকা ধরিয়ে দিয়েন মামা। ভাড়া পাচ্ছি না, আয় ইনকাম একদমই কম। রাজি হয়ে রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশা চলা শুরু হলো, সেই সাথে রিকশা চালক নিজে নিজেই বলতে লাগলেন তার কথা-‘এমনিতেই ভাড়া পাচ্ছি না আবার রিকশার জমা বাড়িয়ে দিয়েছে ১০০ টাকা। আগে রাতে ৩/৪শ টাকা বাড়ি নিয়ে যেতে পারতাম। সেটা দিয়ে কোনমতে, বউ পোলারে নিয়া চলছিলাম। ২ সপ্তাহ ধইর্যা ২শ টাকায় আয় হয়না। আবার জিনিসের যে দাম। এক কেজি পিঁয়াজ কিনলেইতো ১শ টাকা যায়। অন্যান্য কোন জিনিসের দামই কম না। চাল, ডাল, তেল, সবজি কেনা খুব কষ্টের হয়ে গেছে বাবা। মাছ-ডিম বাদই দেন। এরকম চললেতো কদিন পর মানুষের কাছে হাত পাততে হবে। জানতে চাইলাম, এখন ভাড়া কম হচ্ছে কেন ? বললেন, অবরোধেতো বাস-ট্রাক চলছে না। একারণে বাইরে থেকে মানুষ শহরে আসছে না। শহরে বাইরের মানুষ না আসলে ভাড়া পাবো ক্যামনে?
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া শোধ করছি ঐ সময় সামনে এসে হাজির হলেন, ষাটোর্ধ এক দিন মজুর। হাতে একটি কোদাল আর মাটি তোলা ডালি। বললেন, মামা কাজ নাই, খাবার নাই কয়টা টাকা দেন। নাম কী কোথা থেকে এসেছেন জানতে চাইলে নিজের নাম বললেন আব্দুল কাদের। এসেছেন চারঘাট থেকে। বললাম, কী কাজ করেন-বললেন যে যে কাজ দেয় সেটাই করি। মাটি কাটা, জমি পরিস্কার করা, বালু বা ইট তোলা সব কিছু। সকাল থেকে বসে আছি কেউ কাজে নেয়নি। কবে কাজ পেয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, পরশু কাজ পেয়েছিলেন, সাড়ে ৪শ টাকা পেয়েছেন। দ’ুদিনে শেষ হয়ে গেছে। আজ কাজ নাই, ঘরে খাবারও নেই, কয়টা টাকা দেন। আমি বললাম টাকা দেয়া হবে আগে বলেন কাজ নাই ক্যানো ? আব্দুল কাদের উত্তর দিলেন, জানিনাতো বাবা? মানুষর বাড়িতে এমনিতেই কাজ কম পাচ্ছি। একদিন কাজ পেলে ৩/৪ দিন পাচ্ছি না। অটোতে চড়ে ভাড়া দিয়ে আসছি আর খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। ভাড়াটাই লোকসান। আবার বাড়িতে বউ বাচ্চা আশা করে বসে আছে।
কথা হয় আরো কয়েকজন রিকশা ও অটো রিকশা চালকের সাথে। তাদের বক্তব্যও প্রায় একই। শহরে মানুষ কম, ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আয় কম,খরচ বেশি। অটো মালিকদের জমার টাকা দেয়ার পর বাড়িতে নিয়ে যাবার মত টাকাই থাকছে না, সংসার চালানো কষ্টের হয়ে গেছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে চলা অবরোধের প্রভাবে চরম কষ্টে দিন কাটছে পরিবহণ শ্রমিকরা।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধ শুরুর পর থেকে এসব শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। অবরোধ চলাকালে রাজশাহী থেকে দুরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকছে। উপজেলা পর্যায়ে অল্প পরিসরে কিছু বাস চলছে। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন এসব রুটেও যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম থাকছে। একারণে অনেক্ষন পরপর অল্প কয়টা বাস চলছে। ট্রাক চলাচলের সংখ্যাও খুবই কম। এর প্রভাবে বাস ও ট্রাক শ্রমিকরা আছেন চরম কষ্টে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে তাদের দিন কাটছে। রাজশাহী পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান ইসলাম বলেন, রাজশাহীর পরিবহন শ্রমিকরা ভালো নেই। দু:খ কষ্ট নিয়েই দিন কাটছে। একেক জন শ্রমিক একদিন ডিউটি করলে ৩শ থেকে সর্বোচ্চ ৭শ টাকা পর্যন্ত আয় করে। এখন প্রতি চারদিন পর একদিন ডিউটি পাচ্ছে। চারদিনে ৩শটাকা বা ৭শ টাকা আয় করে কিভাবে সংসার চলবে বলেন?
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক বলেন, রাজশাহীতে প্রায় ৫হাজার বাস শ্রমিক তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার নিয়মিত কাজ করে। এসব শ্রমিক কিছুটা হলেও সংকটে পড়েছে। তবে, এখন অবরোধেও রাজশাহী থেকে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর পর্যন্ত বাস চলাচল করছে।