নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী নগরীতে চলাচলকারী এক অসুস্থ রিকশা চালকের পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক। অসুস্থতার কারণে নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়েই রিকশা চালাতেন ঐ রিকশা চালক। সবসময় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকতো তার সিটের পাশেই। এই রিকশাচালকের নাম মাইনুরজ্জামান সেন্টু। রাজশাহী নগরীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে। আর ছেলেও বিয়ে করে পবা উপজেলার দারুশায় থাকেন। স্বামী স্ত্রীর সংসার চালাতে রিকশা চালান সেন্টু। অসুস্থতা বেশি হওয়ায় তাকে বেশিরভাগ সময়ই অক্সিজেন নিতে হয়। একারণে নিজের রিকশাতেই রেখে দিয়েছেন সিলিন্ডার। আর সেখান থেকে নল লেগেছে তার নাকের ভেতরে। সেন্টুকে নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা প্রশাসক তার খোঁজ করেন। বৃহস্পতিবার তার সাথে দেখা করে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সেন্টুকে আর রিকশা চালাতে হবে না, তার প্রয়োজনীয় অন্য কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
প্রায় ৬০ বছর বয়সি সেন্টু জানান, বাড়ির পাশে একটি ভাজাপোড়ার দোকান ছিল তার। ২০১৫ সালের দিকে সেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে ঋন করে ৮০ হাজার টাকায় একটি রিকশা কেনেন। তারপর থেকে তিনি রিকশা চালান এই শহরে। এরই মাঝে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় সাত বছর আগে থেকে তার এই অসুস্থতা ধরা পড়লেও জীবিকার তাগিদে তাকে রিকশা চালাতেই হয়।
সেন্টুর স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, প্রায় সাত বছর আগে থেকে তার অসুখ। গেলো তিন বছর থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন তিনটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। রিকশা চালিয়ে আমাদের দুই মানুষের সংসারের খরচ এবং তার অক্সিজেনসহ ওষুধ কেনা হয়। এদিকে, গত রোববার রিকশা চালিয়ে বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঐ রাতেই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সম্প্রতি সেন্টুর সিলিন্ডার নিয়ে রিকশা চালানোর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে খবরও এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। এরই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ হাসপাতালে দেখতে যান রামেক হাসপাতালে। এসময় তিনি সেন্টুর খোঁজ খবর নেন।
জেলা প্রশাসক শামীম জানান, তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় জেলা প্রশাসন বহন করবে। চিকিৎসক বলেছে অক্সিজেন কনসালেটেন্ট মেশিনটা এখন সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। তাই এই মেশিনটা তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সেন্টুকে আর রিকশা চালাতে হবে না, তার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দীর্ঘ সাত বছর থেকে ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন। তাই রিক্সা চালিয়ে আর সংসার চালানোর টাকা উপার্জন করতে হবে না। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অটোরিক্সার পরিবর্তে তার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।