নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে নিহত নয়জনের মধ্যে চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। এই মৃত্যুর খবর শুনে বাগমারাজুড়েই যেন শোকের আবহ তৈরী হয়েছে। নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। নিহতদের পরিবারে একদিকে যেমন শোক চলছে অন্যদিকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা।
নিহত রাজশাহীর চার প্রবাসী হলেন বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মো. জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুরি কাতিলা গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার, বারইহাটি গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন এবং একই গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের ছেলে মো. আরিফ। রুবেল আরিফের চাচা।
আগুনে নিহত কর্মী সাজেদুল ইসলাম, রুবেল ও আরিফের বাগমারার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইহাটি গ্রামের জফির উদ্দিনের মরিয়ম আক্তারের সাথে একই গ্রামের রুবেলের অনেক দিনের সম্পর্ক। সৌদি আরবে কাজে যাবার পর কয়েকমাস আগে মরিয়মের সাথে তার বিয়ে হয় মোবাইলের মাধ্যমেই। সামনে ছুটি পেলে দেশে ফিরবে এরপর শুরু হবে সংসার। এমন আশা নিয়েই ছিলেন মরিয়ম আর রুবেল। কিন্তু তাদের সেই আশা আর পূরন হলো না। সৌদি আরবে অগ্নিকাÐে মারা গেলেন রুবেল। রুবেলের মৃত্যুকে যেন কোনভাবেই মানতে পারছেন না মরিয়ম। এখন তিনি চান স্বামীর লাশটা পেতে।
সাজেদুলের স্ত্রী রিপা বেগম জানান, দুদিন আগেই স্বামীর সাথে কথা হয়েছে। এবারের ঈদে আসা হয়নি তাই সামনের রমজানে বাড়ি আসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্বামীর আর ফেরা হলোনা । আসবে লাশ। এই বলেই কাঁদছেন রিপা বেগম। তাদের মেয়ে সাদিয়া খাতুন বাবার কথা বলছেন আর কাঁদছেন। বাবার পাঠানো উপহার পেয়েছেন গত সপ্তাহে। কিন্তু বাবাকে আর দেখা হলো না তার। আরিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা শাহাদাত হোসাইন বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। জমি কট দিয়ে যে টাকা পেয়েছিলেন সেই টাকা দিয়ে ছেলেকে সৌদি পাঠিয়েছিলেন। ছেলে দুদিন আগে ফোন দিয়ে বাবার খোঁজ খবর নিয়েছেন। ঠিকভাবে ওষুধ খাচ্ছেন কি না খোজ নিয়েছিলেন। আগামী শুক্রবার আবারো বাবাকে ফোন দিতে চেয়েছিলেন আরিফ। কিন্তু তার আগেই তার মৃত্যুর খবর এলো বাবার কাছে। আরিফের বাবার এখন একটাই চাওয়া ছেলের মরদেহ দৃত পেতে চান তিনি।
রুবেল ও আরিফ সৌদি আরব গেছিলেন সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। ধার কর্জ করে তাদের সৌদি আরবে পাঠায় পাঠায় পরিবার। কিন্তু স্বজনদের এই চলে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছেন তারা। একদিকে যেমন তাদের স্বজন হারানোর বেদনা রয়েছে। তেমনি আর্থিক দিন থেকে ভবিষতের অনিশ্চয়তা দেখছেন তারা।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ শনিবার রাতে বাগমারায় যান। তিনি নিহতদের স্বজনদের সাথে দেখা করে কথা বলেন এবং স্বান্তনা দেন। জেলা প্রশাসক বলেন, যত দ্রæত সম্ভব মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে তারা তৎপর আছে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।