নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থাকায় রাসিক কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি দুলাল শেখ ও সাধারণ সম্পাদক আজমীর আহমেদ মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এই দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে কেন চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, জানতে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে কয়েকদফায় রাসিকের আরও ৩৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাসিকের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তারা অস্থায়ী কর্মচারি। অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রাসিকের সচিব মোবারক হোসেন জানান, গত ৫ আগষ্টের পর একাধিক দফায় দৈনিক মজুরিভিত্তিক হিসেবে কর্মরত ১৬৯জন কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই কর্মস্থলে অবস্থান করতেন না। কেউ কেউ কোনো কাজ না করেও মাসের শেষে শুধু বেতন ভাতা তুলতেন। অনেকেই গত জুলাই মাসের শেষে ও ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় জড়িত ছিলেন। এদের সবাইকে বিদায় করা হয়েছে।
এদিকে রাসিকের আরও ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন স্থায়ী ও ২১ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর এবং গত ১২ নভেম্বর শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়া এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ শোকজ নোটিশের জবাবও দিয়েছেন।
সূত্র মতে, যাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ নূর-ঈ-সাইদ, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম আসাদুজ্জামান সুইট, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজামুল হোদা, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু, সাবেক মেয়র লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী এবং রাসিকের খাদ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা বিপুল কুমার সরকার, জনসংযোগ কর্মকতৃা মোস্তাফিজুর রহমান মিশু, ট্যাক্সেশন কর্মকর্তা (বাজার) আবুল বাশার মাহমুদ মো. তাজউদ্দিন, অডিটর সাখাওয়াত হোসেন, কর আদায়কারী একেএম আবু সাকের, মিলন আকতার, সাগর দাস, মনিরুজ্জামান মনির, মাসুক আলম খান সুমন, সুলতান আলী, দপ্তরি আজহার আলী, এমএলএস মাহমুদন্নবী ও ইসমাইল হোসেন রনিসহ ৩৮ জন।
শোকজ পাওয়া প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ নূর-ঈ-সাইদ বলেন, আমি ইতিমধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পুরোটাই ভিত্তিহীন। যেহেতু কর্তৃপক্ষ শোকজ দিয়েছেন, তাই বিধি-মোতাবেক আমি জবাব দিয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাসিকের শোকজ পাওয়া একজন কর্মকর্তা জানান, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ কেউ নিজেদের ক্ষমতাবান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে অন্য সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে হেনস্থা করার চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ভয় পাচ্ছেন। চাপে পড়ে শোকজ করছেন।
জানা গেছে, শোকজ পাওয়াদের অন্যতম সাবেক মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী বিপুল কুমার সরকারকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাসিকের প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, অস্থায়ী কর্মচারীদের মধ্যে যারা কাজ করতেন না, কর্মচারীসূলভ আচরণ না করে শৃঙ্খলা পরিপন্থি আচরণ করেছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারও কারও কর্মদক্ষতা সন্তোষজনক না হওয়ায়, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অস্থায়ী কর্মচারিরা দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করতেন। কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন না হলে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। স্থায়ী কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত আদেশ এবং শোকজে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কথা নোটিশে বলা হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা তিন শতাধিক। অন্যদিকে অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬০০ জন। ইতিমধ্যে কয়েকদফায় তাদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৬৯জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে রাসিকের কর্মচারীদের অনেকেই জানিয়েছেন অব্যাহতি পাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা আরও বেশি। সঠিক সংখ্যাটা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করছে না।
বাংলার কথা/নভেম্বর ২১, ২০২৪