• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাজশাহীতে সাবেক এমপিকে বহনকারী প্রিজনভ্যানে হামলা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়েও আসছে পরিবর্তন সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করে সহিংসতার ঘটনায় ৮৮ মামলা, ৭০ জন গ্রেপ্তার নবজাতকের মরদেহ আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায়! চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩ মধ্যরাতে হামলায় আ. লীগকে দায়ী করে যা বললেন হাসনাত শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশ পছন্দ করছে না : দিল্লিকে পররাষ্ট্র সচিবের বার্তা ভারতে ধর্ষণের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৪ নেতা গ্রেপ্তার ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকায় আনার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার সীমান্তহত্যার অসঙ্গতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে: পররাষ্ট্রসচিব

বদলি আতঙ্ক ওএসডির ভয় সচিবালয়ে, পরিবর্তন হবে সব ডিসি-এসপি

রিপোর্টার নাম:
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

বাংলার কথা ডেস্ক

জনপ্রশাসনে চলছে চাপা উত্তেজনা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা রয়েছেন বদলি ও ওএসডি আতঙ্কে। বিশেষ করে সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবরা তাদের বিদায়ের আশঙ্কা করছেন। সচিবদের এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে তাদের অধস্তন কর্মকর্তাদের ওপরও। সামগ্রিকভাবে সরকারি কাজের গতি কমেছে। কাজেকর্মে মন নেই কারও। সচিবরা সাধারণত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তাই আতঙ্কে রয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব ও সিনিয়র সচিবরা।

এমন অবস্থায় আবারও একাট্টা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ আমলে নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা গতকাল বুধবারও সচিবালয়ে সভা ও শোডাউন করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত রাতে চুক্তিতে থাকা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগগুলো বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে।

গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দু’দিন ধরে অফিস খোলা হলেও মন্ত্রণালয়ের দপ্তরগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি খুবই কম। নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন সেনাসদস্যরা। অভ্যর্থনা কেন্দ্র ছিল বন্ধ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন অনুপস্থিত। আর অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এসেছেন, তারাও নিজেদের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলাপ করেই সময় কাটাচ্ছেন। তাদের প্রায় অধিকাংশের আলোচনায় এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে কে কে আসতে পারেন, কে কোন দপ্তর পেতে পারেন, এসব বিষয় প্রাধান্য পায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুক্তিতে থাকা সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করা হবে। গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা কর্মকর্তারা অপরিহার্য না হলেও বিগত সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে মেয়াদ শেষে তাদের চুক্তিতে রেখে দেওয়া হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তখন হিড়িক পড়ে, ভোটের পর অর্ধশতাধিক আস্থাভাজন কর্মকর্তা চুক্তিতে নিয়োগ পান।

ইতোমধ্যে সরকারের পতন হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তি বাতিল করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আইজিপির পদটি সরাসরি আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এখন অন্য সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও সচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন। শুধু গত জুনেই মুখ্য সচিবসহ অন্তত চারটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই সিনিয়র সচিব মর্যাদায় সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির ‘প্রধান পরামর্শক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয় আইজিপি মামুনের। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ সরকারপন্থি হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা ব্যাপক আতঙ্কে আছেন।

প্রশাসনে চুক্তিতে যারা এখন আছেন তারা হলেন– মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন ও পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার।

এ ছাড়া আছেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের শোডাউন

দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকার পর গত দু’দিনে নড়েচড়ে বসেছেন সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিএনপিপন্থি কর্মচারীরা। তাদের দাবি, দু-একদিনের মধ্যেই তাদের পদোন্নতি দিতে হবে। গতকাল দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে একত্রিত হন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারীরা। এ মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় ১০০ কর্মচারী একত্রিত হয়ে জরুরি আলোচনা করেন। তৈরি করেন পদোন্নতি বঞ্চিতদের তালিকা। পরে এ তালিকা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) রিপন চাকমার দপ্তরে যান তারা। তাঁকে না পেয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন তারা। পরে তারা আবারও আলোচনায় বসেন। পরে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন।

এ মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারীদের সভাপতি এ বি এম আলামিন বলেন, আমরা চাই আজকালের মধ্যেই আমাদের পদোন্নতি দিতে হবে। আওয়ামী সরকারের আমলে অনেকে আমাদের পরে যোগদান করেও তারা আমাদের আগে পদোন্নতি পেয়েছেন। অনেকেই পরে যোগদান করে জ্যেষ্ঠতার তালিকার আগে স্থান পেয়েছেন। এতদিন আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে।

এ ছাড়া সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের সামনে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সকালের দিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতি বঞ্চিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের একটি দল সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও দল বেঁধে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তারা।

বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলছেন, সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মন্ত্রী-সচিবের দপ্তরে যারা কাজ করছেন, তারা স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাবেন। যারা এতদিন বঞ্চিত ছিলেন তারা এসব জায়গায় আসবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সচিবরা অফিস করছেন না

সরকার পতনের পর অফিস করছেন না গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত দু’দিন অফিসে আসছেন না। প্রথম দিন না এলেও গতকাল অফিসে এসেছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এ দুই গুরুত্বপূর্ণ আমলা সচিবালয়ে ১ নম্বর ভবনে বসেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুছ সাদাত সেলিমও অফিসে আসেননি। সচিবালয়ে অফিস করছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলম। তবে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান মঙ্গলবার এলেও বুধবার অফিসে আসেননি বলে তাঁর দপ্তরের কর্মচারীরা জানিয়েছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারোয়ার পৌনে ১টার দিকে অফিসে আসেন। তবে তিনি সচিবালায়ে আসতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেননি।

সব জেলার ডিসি-এসপি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় সুবিধার জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমান ডিসি-এসপিদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর নতুন ডিসি-এসপি পদায়ন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

এর আগে প্রশাসনের উচ্চ স্তরেও বেশ কিছু রদবদল করা হবে বলে জানা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা নেই, নির্বাহী দায়িত্বে রাষ্ট্রপতি

দেশে কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা নেই জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে নির্বাহী দায়িত্ব পালন করছেন রাষ্ট্রপতি।

গতকাল সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন রাষ্ট্রপতির আদেশে চলছে। তাই দেশে এখন সরকার নেই বলে যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এই মুহূর্তে কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।

সূত্র : সমকাল

 

বাংলার কথা/আগস্ট ০৮, ২০২৪


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরিতে আরো নিউজ