• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রাজশাহীতে সাবেক এমপিকে বহনকারী প্রিজনভ্যানে হামলা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়েও আসছে পরিবর্তন সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করে সহিংসতার ঘটনায় ৮৮ মামলা, ৭০ জন গ্রেপ্তার নবজাতকের মরদেহ আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায়! চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩ মধ্যরাতে হামলায় আ. লীগকে দায়ী করে যা বললেন হাসনাত শেখ হাসিনার বক্তব্য বাংলাদেশ পছন্দ করছে না : দিল্লিকে পররাষ্ট্র সচিবের বার্তা ভারতে ধর্ষণের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৪ নেতা গ্রেপ্তার ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকায় আনার অনুরোধ প্রধান উপদেষ্টার সীমান্তহত্যার অসঙ্গতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে: পররাষ্ট্রসচিব

দেশে ফিরছেন ‘আয়নাঘর’ থেকে বেঁচে ফেরা পিয়াস

রিপোর্টার নাম:
আপডেট রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪

বাংলার কথা ডেস্ক

পিয়াস হাওলাদার দেশে ফিরবেন। বাংলাদেশে ছাত্র অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পরে ৩০ বছর বয়সী পিয়াস এখন উচ্ছ্বাসে ফুটছেন। দিন গুনছেন কুয়েত থেকে দেশে ফেরার।

পিয়াস জঙ্গি নন। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না কোনও দিন, আজও নেই। খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন একটি গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে পিয়াস ছিলেন সাধারণ এক জন বিএনপি কর্মী। শহরে পড়াশোনা করতে এসে বিএনপির শাখা সংগঠন ছাত্রদলের কর্মী হয়ে যান। ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশে বিরোধী দল করা ছিল শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশের কাছে ভয়ানক অপরাধ। ২০১০-এ একবার ঢাকার রাস্তা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়। পিয়াস তখন দলের কর্মসূচির হ্যান্ডবিল বিলচ্ছিলেন। অজ্ঞাত এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে বন্দি করে, আজ যার পরিচিতি ‘আয়নাঘর’ হিসাবে।
সেখানে মাঝে মাঝে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করত পুলিশ, অভিযোগ করেছেন পিয়াস। পরে এক মাঝারি সারির পুলিশ কর্তার দাবি মেনে ‘মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে’ জামিনে মুক্তি মেলে তার।তার পরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের পরামর্শে ঢাকা থেকে খুলনা আসেন পিয়াস। ২০১১ সালে খুলনা থেকে পুলিশ আবার তুলে নিয়ে যায় পিয়াসকে। তার দাবি, দেশের সব বড় শহরে এমন ‘আয়নাঘর’ আছে। আমাকে এ বার আটক করা হয় খুলনার আয়নাঘরে। সেটা কোথায় আমার কোনও ধারণা ছিল না, আজও নেই।

তবে খুলনার ‘আয়নাঘর’-এ যে অনেককে রাখা হয়েছিল, তাদের কান্না ও চিৎকারে টের পেতেন পিয়াস। নিয়মিত নির্যাতন করা হত তাদের। পিয়াসের অভিযোগ, যখন ইচ্ছা হত আমাকে ঘর থেকে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হত। যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যেতাম। জ্ঞান ফিরলে দেখতাম পুরনো ঘরে পড়ে আছি। বাড়ির লোকেরা হন্যে হয়ে খুঁজত। হদিস পেত না।

এর পরে এক পুলিশ কর্তা হঠাৎ ‘সদাশয়’ হয়ে উঠে পিয়াসের বাড়িতে খবর পাঠান। তাকে আদালতে তোলা হলে জামিনও পেয়ে যান। পুলিশ কর্তার মুখোশ এ বার খুলে যায়। বাড়ির লোককে তিনি জানান, আর তো গুম করা হবে না, এ বার ‘এনকাউন্টার’। তার চেয়ে তাকে মোটা টাকা দিলে পিয়াসকে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি।

পিয়াসের কথায়, ঢাকা-খুলনার বাইরে কোথাও যাইনি, আমাকে বসিরহাটের কাছে সীমান্ত পার করে দেওয়া হল। কোনও কাগজপত্র নেই, চেনা কেউ নেই।

ছোটখাটো কাজ করে আর ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়ে থেকে এক সময়ে টাকার বিনিময়ে ভারতীয় কিছু পরিচয়পত্রও করিয়ে নেন পিয়াস। বেঙ্গালুরু ও দিল্লিতে কাজ করে কয়েক মাস করে কাটান। কিন্তু পেট ভরে না, সঙ্গে ধরা পড়ার আতঙ্ক।

বাড়ির লোক ফের সেই প্রভাবশালী পুলিশ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আরও মোটা টাকার বিনিময়ে পিয়াসের বাংলাদেশি পাসপোর্ট করিয়ে তাকে আরবের কোনও দেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেন তিনি। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে অনেকটা জমিজমা বিক্রি করে বিপুল টাকা সেই পুলিশ কর্তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএনপি না-করলে ‘এনকাউন্টার’ করা হবে না আশ্বাস পেয়ে দেশে ফেরেন পিয়াস। কয়েক মাস পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে অবশেষে এখন কুয়েতে।

কুয়েতে কেমন আছেন পিয়াস? তার জবাব, ক্রীতদাসের মতো। প্রতি ভোটের আগে আশায় থাকি, সরকার কি এ বার বদলাবে? ২০১৪ সালে ভোট গেল, ২০১৯ ও ২০২৪ সালেও ভোট হলো। ভাবতাম, আরবের শেখদের মতোই কি বাংলাদেশে শেখ পরিবারের চিরস্থায়ী শাসন কায়েম হল? আমার কি দেশে ফেরা হবেই না?

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার দিনেই বার্তা পাঠিয়েছিলাম—‘পিয়াস, দেশে ফেরার সময় হয়েছে।’ ছোট্ট জবাব ছিল, ‘জ্বি দাদা।’ তার পরেই টেলিফোন। উচ্ছ্বাস ধরছে না যেন। কে বলবে, মাস কয়েক আগে নির্বাচনের ঠিক আগে বার্তা পাঠিয়েছিলেন পিয়াস, ‘আমি আর এই বাংলাদেশে থাকতে চাই না! অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবেন দাদা?’ শুক্রবার ফোনে জানালেন, যত শিগগিরই সম্ভব পরিবারের কাছে ফিরবেন।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার কাছে পিয়াসের কথা বলেছিলাম। কেউই তাকে চিনতে পারেননি। আবার সাহায্যের আশ্বাসও দিতে পারেননি। তারাও যে তখন, কবে জেলে আছেন, কবে বাইরে—নিজেরাও জানেন না। কিন্তু পুলিশের ওপরে বিরোধী দলের কর্মীদের আক্রোশের কারণও বুঝি কম নেই। মানবাধিকার কর্মীদের হিসাবে, এভাবে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে ৫০০ এর বেশি বিরোধী কর্মী আর কোনও দিন ফিরে আসেননি। পিয়াস সৌভাগ্যবান, ‘আয়নাঘর’ থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরেছেন।

সূত্র: মানবজমিন

 

বাংলার কথা/আগস্ট ১১, ২০২৪


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরিতে আরো নিউজ